ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)-এর আয়োজনে প্রস্তাবিত সাক্ষ্য আইনের উপর গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)-এর আইন বিভাগের আয়োজনে ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে উত্থাপিত এভিডেন্স (সংশোধনী) বিল, ২০২২-এর উপর একটি গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার। আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ডিআইইউ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, এমপি গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন।
ডিআইইউ আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারপার্সন রাইসুল ইসলাম সৌরভের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল’য়ের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ব্যারিস্টার আহমেদ এহসানুল কবির, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের চেয়ারম্যান এবিএম ইমদাদুল হক খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল’ইয়ের সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা হোসেন ও জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সাইমুম রেজা তালুকদার এবং ধর্ষণ আইন সংস্কার জোটের অন্যতম সদস্য তাকবীর হুদা জাতীয় সংসদে উত্থাপিত নতুন এই সাক্ষ্য আইন সম্পর্কে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
আলোচনায় বক্তারা সংসদে আইন পাস করার আগে জনগণের অংশগ্রহণ এবং যেকোনো বিলের সহজে অনলাইনে খুঁজে পাওয়ার ওপর জোর দেন। এ সময় তারা বলেন, ডিজিটাল সাক্ষ্য সংক্রান্ত বিধান সন্নিবেশিত করে শতাব্দী প্রাচীন এভিডেন্স অ্যাক্টকে আধুনিক আইনে পরিণত করা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে বর্তমান খসড়াটিতে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে; যেমন এখানে ডিজিটাল রেকর্ড এবং ইলেকট্রনিক রেকর্ড শব্দ দুইটি একই অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, যা মোটেই সঠিক নয়। আবার ডিজিটাল প্রমাণে অযাচিত হস্তক্ষেপ বা ম্যানিপুলেশনের হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তাই ডিজিটাল সাক্ষ্যের সত্যতা যাচাই করার জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করতে হবে। প্রচলিত সাক্ষ্য আইনটি বৃটিশ শাসনামলে ১৮৭২ সালে ইংরেজিতে প্রণীত হয়েছিল; যেখানে বর্তমান প্রস্তাবিত বিলটি ২০০৬ সালের বাংলায় প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনকে কিছু শব্দের সংজ্ঞার জন্য রেফার করেছে। ফলে আদালতে পরবর্তীতে আইনের ব্যাখ্যায় ভাষাগত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। আলোচকদের মতে প্রস্তাবিত বিলের সংশোধনীগুলি মূলত ভারতীয় সাক্ষ্য আইন থেকে হুবুহু অনুলিপি করা হয়েছে। যেখানে ভারতীয় আদালত ইতোমধ্যে তাদের আইনের কিছু বিধান বিবেচনা করার জন্য রায় দিয়েছে, সেখানে সেই আইন ২০২২ সালে বাংলাদেশে প্রণয়নের চিন্তা করা অবান্তর।
ধর্ষণ মামলায় ভুক্তভোগীর আগের খারাপ চরিত্র নতুন প্রস্তাবিত আইনে আর প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না; যদিও আইনে বিধান রাখা হয়েছে যে ন্যায় বিচার নিশ্চিতের স্বার্থে আদালত কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে অনুমতি সাপেক্ষে এ সংক্রান্ত প্রশ্ন তোলার সুযোগ দিতে পারবে। তবে আলোচকগণ মনে করেন এ বিধান গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আদালত কখন চরিত্রগত প্রমাণ আনার অনুমতি দিবে এবং কখন কোন মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে দিবে না সে সম্পর্কে বিলে কিছু বলা নেই। গোলটেবিলে বক্তারা এই আইনটি পাস করার আগে বিভিন্ন পক্ষের সাথে আরও আলোচনা ও পরামর্শের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান। কারণ সাক্ষ্য আইন দেওয়ানি এবং ফৌজদারি উভয় প্রকার বিচার কার্যক্রমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবশেষে ডিআইইউ আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এডব্লিউএম আবদুল হক আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং ডিআইইউ আলোচনা থেকে উঠে আসা সুপারিশসমূহ সংসদ সদস্যদের নজরে নিয়ে আসবে বলে আশ্বস্ত করেন।