সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানে তামাক কো¤পানির আইনি ফাঁকি, সংবাদ সম্মেলনে টিসিআরসির গবেষণার ফলাফল প্রকাশ
দেশের ৮৭% তামাকপণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান হলেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার সকল উপধারা অনুযায়ী সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের হার মাত্র ৩%। এ থেকেই এটা স্পষ্টই বলা যায় যে, তামাক কোম্পানিগুলো চাপে পড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করলেও তা নিতান্তই দায় সাড়া ভাবে প্রদান করছে। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের যৌথভাবে আয়োজিত রাজধানীর বিএমএ ভবনের শহীদ ডাঃ শামসুল আলম খান (মিলন) সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত “তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন- বর্তমান অবস্থা” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য উঠে আসে। টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেলের প্রকল্প পরিচালক ও সদস্য সচিব জনাব বজলুর রহমান এর সভাপতিত্বে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব জনাব খায়রুল আলম সেখ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাটাবের নির্বাহী পরিচালক জনাব কামাল উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনিস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার ইপিডিমিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জনাব ডাঃ হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হেলাল আহম্মেদ।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিসিআরসির গবেষণা সহকারী ও প্রকল্প কর্মকর্তা ফারহানা জামান লিজা। তিনি বলেন, গত ১৯ মার্চ ২০১৬ হতে তিন বছর ধরে এই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করা হচ্ছে। গত ১৯ মার্চ ২০১৯ হতে ১৮ জুন ২০১৯ পর্যন্ত গবেষণাটিতে মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, লক্ষীপুর, বান্দরবান, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও দিনাজপুর এই ৮টি জেলার সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। টিসিআরসি পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা যায়, মোট ৪২৭ টি তামাক পণ্য সংগ্রহ করা হয়, যার মধ্যে ৮৭% তামাকপণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ৫০% এলাকা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণের হার ৬৯% এ উন্নীত হয়েছে। যদিও মোড়কের উভয় দিকে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের হার মাত্র ৪৮%। তিনি আরো বলেন, আমাদের অনেক সফলতা এসেছে। কার্টনেও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর মুদ্রণ শুরু হয়েছে। এই সাফল্যের ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। তবে এর পাশাপাশি বেশ কিছু ব্যর্থতার কথাও তিনি তুলে ধরেন। ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের হার খুবই হতাশাজনক। বিড়ির মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ব্যান্ড রোল দিয়ে ঢাকা থাকার হার ৮৮%। সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে অর্ন্তবর্তীকালীন নির্দেশনা বহাল থাকা এবং আইনের সব উপধারা মেনে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের হার নিয়ে তিনি আক্ষেপ করেন। ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে আইনের সঠিক বাস্তবায়নের হার মাত্র ৩%। ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মোড়কের নিচে বা উপরে মুদ্রণ করা থেকে উত্তোরণের সময় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সমস্যার সমাধানে মোড়কের ৯০% এলাকা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের কোন বিকল্প নেই। এছাড়া বিড়ি, জর্দ্দা ও গুলের ক্ষেত্রে মোড়কের ভিন্নতা, সাইজের ভিন্নতা, মানসম্মত মোড়ক না থাকা, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের উপযুক্ত মোড়ক না করা, অতি ছোট মোড়কসহ বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতার একমাত্র সমাধান হতে পারে ঝঃধহফধৎফ চধপশধমরহম প্রবর্তন। অবিলম্বে সরকারকে এধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেন তিনি।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, নাটাবের প্রকল্প পরিচালক জনাব এ কে এম খলিলুল্লাহ, ব্যুরো অব ইকোনোমিক রিসার্চ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের প্রতিনিধি শুভ কর্মকার, ঢাকা আহসানিয়া মিশন এর প্রোগ্রাম অফিসার শারমিন রহমান, এইডের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার কাজী মোহাম্মদ হাসিবুল হক, বিআরডিএস এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ রিয়াজুল ইসলাম, বিসিসিপি এর প্রতিনিধি উম্মে সালমা এ্যানি, বিএসএন এর নির্বাহী পরিচালক ফিরোজা বেগম, উদ্যোগের প্রতিনিধি মোঃ আফরিন ইসলাম রুবেল, ওয়ার্ক ফর দি বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রতিনিধি রাকিবা আক্তার রিমু। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের বিভিন্ন সদস্য সংগঠন, তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি, সাংবাদিকবৃন্দ ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীগণ উপস্থিত ছিলেন।